বিটিবি নিউজ ডেস্ক: বসন্ত রোগটি পৃথিবী থেকে প্রায় নির্মূল হয়ে গেলেও চিকেন পক্স বা জলবসন্ত এখনো আছে। এটি বেশ পরিচিত ও ছোঁয়াচে ভাইরাসঘটিত রোগ। এই ভাইরাসের নাম ভ্যারিসেলা জন্টার।
জলবসন্ত বা চিকেন পক্স অত্যন্ত সংক্রামক রোগ, যা ভেরিসেলা জোস্টার ভাইরাসের মাধ্যমে হয়। গরম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাইরাসটির আক্রমণ বেশি দেখা দেয়। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার একটু বেশি।
যে সময় ছড়ায়
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঠান্ডার সময় এ রোগ বেশি দেখা দিলেও মহামারি আকারে বছরজুড়েই এর বিস্তার দেখা যেতে পারে।
যেভাবে ছড়াতে পারে
- রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে এলে
- রোগীর থুতু, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে
- রোগীর ব্যবহৃত সামগ্রীর মাধ্যমে
- গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে মা আক্রান্ত হলে গর্ভজাত শিশুও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে
- প্রসবের এক সপ্তাহ আগে ও পরে মা এই রোগে আক্রান্ত হলে নবজাতকেরও রোগটি হতে পারে।
লক্ষণ
সাধারণত ২ থেকে ৮ বছরের শিশুদের বেশি হতে দেখা যায় এ রোগ। রোগটির সুপ্তকাল অতিক্রম করে প্রথম দিকে জ্বর ১০০ থেকে ১০৬ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে। ক্লান্ত লাগা, মাথাব্যথা, অরুচি ও বমিভাব হতে দেখা যায়। তবে এক বছর বয়সের নিচের শিশুদের প্রাথমিক এই লক্ষণগুলো সাধারণত দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে সরাসরি প্রথম দিনেই চামড়ায় র্যাশ অথবা লালচে দাগ দেখা যেতে পারে। দানাগুলো প্রথম দিকে লালচে ভাব, পরে উঁচু হয়ে পানিপূর্ণ হয়ে ৩ থেকে ৪ দিন থাকার পর ঘোলাটে হয়ে যায়। শেষে দানাগুলো শুকিয়ে গিয়ে আলগা আবরণ খসে পড়তে দেখা যায়।
প্রথম দিকের দানাগুলো শুকাতে শুরু করলেও নতুন নতুন দানা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় উঠতে দেখা যায়।
চিকেন পক্সের টিকা দেওয়া থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় শতভাগ। তবে টিকা দেওয়া থাকলেও ওয়াইল্ড টাইপের ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে রোগটির তীব্রতা কম হয়ে থাকে।
জলবসন্ত থেকে জটিলতা
- ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
- শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া
- স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ বা এনকেফেলাইটিস, সেরেবেলার এটাক্সিয়া
- গর্ভজাত শিশুর স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, হাত, পা ও চামড়ার গঠন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা
- মৃত শিশু প্রসবের আশঙ্কা।
রোগের সুপ্তকাল
১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত রোগটি মানবদেহে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
চিকিৎসাব্যবস্থা
- খাবার: কুসুম গরম তরল খাবারসহ স্বাভাবিক যেকোনো খাবার পরিমাণে অল্প করে বারবার খাওয়াতে হবে।
- ব্যথানাশক: প্যারাসিটামল-জাতীয় সিরাপ দেওয়া যেতে পারে।
- চুলকানি হলে: অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ অথবা ক্যালামাইন লোশন শরীরে ব্যবহার করতে হবে।
- মুখগহ্বর: সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের সংক্রমণ: অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে হবে।
- রোগের তীব্রতায়: চামড়ায় প্রদাহ বেড়ে গেলে বা রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
সোনামণির চিকেন পক্স বা জলবসন্ত ঠেকাতে প্রতিষেধক
১৩মাসের বড় যে কারোর জন্যই ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের ব্যবধানে ২ বার এই ইনজেকশন দিতে হয় । বাংলাদেশে বর্তমানে সব হাসপাতালেই চিকেনপক্সের ভ্যাকসিন পাওয়া যায় এবং অবশ্যই চিকেন পক্স আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ থেকে আপনার শিশুকে দূরে রাখুন। যেকোনো টিকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে দেওয়া উচিত। সুস্থতায় বেড়ে উঠুক আপনার সোনামণি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন