মো. আব্দুল বারি খান: শিক্ষানগরী ও সবুজ পরিবেশের পরিচ্ছন্ন শহর নামে খ্যাত রাজশাহী। আবার বাংলাদেশ আহলে হাদীসের অন্যতম নগরী রাজশাহী। মিনিষ্ট্রি অফ ইসলামিক এ্যাফিয়ারস, দাওয়া এ্যান্ড গাইডেন্স এর পক্ষ থেকে কোরআন ও সহীহ হাদিছের আলো ছড়াতে এবং এর দাওয়াত পৌঁছাতে মদিনার অন্যতম আলেম যখন ক’দিনের জন্য এ নগরীতে! আকীদা শিক্ষায় এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সৃষ্টিতে আল-জামি‘আহআস-সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসা প্রঙ্গন ডাঙ্গীপাড়ায় মদিনার অন্যতম দ্বীনি আলেম শাইখ সলিহ বিন আব্দুল আজিজ বিন সুলাইমান সিনদী (হাফিযাহুল্লাহ) আগমন করেন। ফাযিলাতুশ শাইখ সলিহ বিন আব্দুল আজিজ বিন সুলাইমান সিনদী (হাফিযাহুল্লাহ) সৌদি আরবের কিবারুল উলামা–এর অন্যতম সদস্য, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আকীদা বিভাগের অধ্যাপক এবং মসজিদে নববীর উস্তায বলে জানা গেছে।
জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান মুহাদ্দিস শাইখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহসহ তার সঙ্গীয়দের নিয়ে গত ১৩ জুলাই রাজশাহী বিমানবন্দরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে অতিথিবৃন্দকে বিমানগেট থেকেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে নিয়ে আসেন।
রিলিজিয়াস এ্যাটাশে অফিস রাজকীয় সউদী দূতাবাস, বাংলাদেশ ঢাকায় আগমন করার পর থেকে সফরের দায়িত্বশীল হিসেবে সফর সঙ্গী ছিলেন এম্বাসির পক্ষ থেকে শাইখ মাসউদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজকীয় সৌদিদূতাবাস, বাংলাদেশ–এর প্রধান উস্তায মুবারক বিন আমিক আল আনাযী এবং সৌদি আরব থেকে আগত দুইজন মিডিয়া প্রতিনিধি (ক্যামেরাম্যান)।
ঐদিন জামিআয় প্রবেশের পর মাগরিবের সালাতের পূর্বে একটি মনোজ্ঞঅভ্যর্থনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শুরু হয় তিনদিন ব্যাপী দাওরা ইলমিয়া একাডেমিক কোর্সের আকীদা বিষয়ক শাইখের প্রথম দারস।
সউদী মেহমান মদিনার কিবার আলেম ড. সলিহ বিন আব্দুল আজীজ আস-সিন্দি’র স্বগত অনুষ্ঠান এবং দারস
প্রতিদিন ফজরের সালাতের পর দুইঘণ্টা এবং মাগরিবের সালাতের পর দুই ঘণ্টা করে নিয়মিত সহীহ আকীদার দারস অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিদায়ের দিনও জোহরের সালাতের পরও প্রায় ২ ঘন্টা দারস দিয়েছেন তিনি।
তিন দিন ব্যাপী দাওরা ইলমিয়্যাহ এর ২য় দারসে শারহুস সুন্নাহ থেকে দারস দিচ্ছেন উস্তায ড. সলিহ আস সিন্দি হাফিজাহুল্লাহ
ফজর, যহর ও মাগরিবের সালাতের পর দারসে উপস্থিত থেকে জানা যায়, দাওরা ইলমিয়া কোর্সে ফাযিলাতুশ শাইখ সলিহ বিন আব্দুল আজিজ বিন সুলাইমান সিনদী (হাফিযাহুল্লাহ) আবরী ভাষায় কোরআন ও হাদীছের আলোকে সালাফী আকীদার মূলনীতি, বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর প্রাণবন্ত আলোচনা তুলে ধরেন।
তিনি ইসমাইল ইবন ইয়াহইয়া আল-মুযানি এর আস-সুন্নাহ গ্রন্থ’র (এখানে সুন্নাহ অর্থ আকীদাহ বুঝানো হয়েছে) ব্যাখ্যা পুরোপুরি আরবি ভাষাতেই তুলে ধরেন। আল্লাহ ভীতি, আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (صلى الله عليه وسلم)’র উপর ভালোবাসা নিয়ে দরদমাখা কন্ঠে আরবী ভায়ায় তাঁর প্রাণবন্তকর আলোচনা উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হৃদয় ছুঁয়েছে।
তিন দিন ব্যাপী দাওরা ইলমিয়্যাহ এর ৩য় দারসে সরাসরি দারস দিচ্ছেন উস্তায ড. সলিহ আস সিন্দি (হাফিঃ)
তিন দিন ব্যাপী দাওরা ইলমিয়্যাহ এর ৪র্থ দারসে সরাসরি দারস দিচ্ছেন উস্তায ড. সলিহ আস সিন্দি (হাফিঃ)
১৫ জুলাই তার সমাপনী দারসের পর হৃদয়স্পর্শী বিদায় অভ্যর্থনা জানানো হয়। এ সময় সৌদি দূতাবাসের পক্ষ থেকে সমস্তছাত্রদের সার্টিফিকেট ও ব্যাগ হাদিয়া হিসেবে প্রদান করা হয়।
আল-জামি‘আহআস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহী–এর পক্ষ থেকে শাইখ আব্দুর রাজ্জাক হাফিযাহুল্লাহ শাইখ সলিহ বিন আব্দুল আজিজ বিন সুলাইমান সিনদী (হাফিযাহুল্লাহ)কে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট উপহার হিসেবে প্রদান করেন। একই সঙ্গে জামিয়ার ছাত্রগণ একসঙ্গে ওই মেহমানকে একটি বিশেষ উপহার সামগ্রী তুলে দেন।
বিদায়ী বক্তব্যে, শাইখ সালিহ আস-সিনদী হাফিযাহুল্লাহ বলেন, "এই জীবন একটি পরীক্ষা। যে এতে সফল হতে চায়, তাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যারা আল্লাহর আনুগত্যে বেড়ে ওঠে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন।"
এর পর তিনি জামিয়ার আতিথেয়তা, সৌজন্যতা ও শৃঙ্খলার প্রশংসা করেন এবং শাইখ আব্দুর রাজ্জাক হাফিযাহুল্লাহ ও শাইখ মাসউদ সাউদ–সহসকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিন দিনের ওই দারস ও অনুষ্ঠানটি পর্যায়ক্রমে উপস্থপনায় ছিলেন আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহিম বিন আব্দুর রাজ্জাক।
এই সফর নিছক একটি আলেমের সফর নয় বরং এটি ছিল সহীহ আকীদা, সালাফীদাওয়াহ, ছাত্র-শিক্ষক ঐক্য ও আন্তর্জাতিক ইসলামীসংযোগের একব্যতিক্রমধর্মী অধ্যায়। যা আল-জামি‘আহআস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহী ও বাংলাদেশের–এর ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
এই দারসটি তাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চ্যানেল “Al Itisam TV”, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ–এর ফেসবুকপেজ এবং শাইখ আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী মাদানী–এর পেজ থেকে সম্প্রচারিত হয় বলেও জানা গেছে।