ঘাড়ে ব্যথা যে কারণে কখনোই অবহেলা করবেন না

 

ডা. প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী

আধুনিক জীবনযাপনকারী মানুষের বিকৃত শারীরিক ভঙ্গির কারণে মেরুদণ্ডে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মেরুদণ্ডের সমস্যার মধ্যে ঘাড়ব্যথা অন্যতম। বিভিন্ন কারণে ঘাড়ব্যথা হয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ মানুষই সামান্য ব্যথায় তেমন গুরুত্ব দিতে চান না। বিভিন্ন পেশাজীবী, যারা সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করেন, তারা সহজেই ঘাড়ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আবার কর্মজীবী মানুষ, যারা ঘাড়ে, মাথায় বা কাঁধে ভারী জিনিস বহন করেন, তাদের ঘাড়ব্যথার প্রবণতা বেশি।


সমস্যার কারণ : আঘাতজনিত কারণে ঘাড়ের পেশি ও লিগামেন্টে হঠাৎ করে টান অথবা চাপ। সঠিকভাবে না বসার কারণে ঘাড়ের হাড়গুলোর বক্রতার অস্বাভাবিক পরিবর্তন। ঘাড়ের মেরুদণ্ডের ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ, ডিস্কের স্থানচ্যুতি, মেরুরজ্জু বা নার্ভের ওপর চাপ। বাতজনিত কারণ ছাড়াও বয়সজনিত পরিবর্তন, অত্যধিক মানসিক চাপে এ ব্যথা হতে পারে।


উপসর্গ : ঘাড়ব্যথা। ব্যথা কাঁধে, বুকে, মাথার পেছনে, বাহু, কনুই কিংবা হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঘাড়ে ব্যথা, সকাল ও শেষরাতে ঘাড় জ্যাম হয়ে থাকা, নুইতে কষ্ট হওয়া। হঠাৎ তীব্র ঘাড়ব্যথা, ঘাড় ঘোরাতে কষ্ট হওয়া, ঘাড় একদিকে বেঁকে যাওয়া। ঘাড় থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত ঝিঝি করা বা অবশ মনে হওয়া কিংবা বোধশক্তি কমে যাওয়া। কিছু ক্ষেত্রে হাত-পায়ে দুর্বলতা, মাংস শুকিয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। অনেক সময় ঘাড়ব্যথার পাশাপাশি মাথা ঘোরানোর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।


যারা ঝুঁকিতে : অফিস কিংবা বাড়িতে যারা সারাক্ষণ ঘাড় নুইয়ে কাজ করেন; যারা মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি ব্যবহার করেন; যারা ঘাড়, মাথা বা কাঁধে ভারী জিনিস বহন করেন; যারা অত্যধিক ভ্রমণ করেন; যারা উঁচু বালিশ ব্যবহার করেন।


সমাধানের উপায় : ঘাড়ব্যথার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজন। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন। বেদনানাশক ওষুধ, পেশির রিল্যাক্সেন্ট ওষুধ উপকারী হতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। ফিজিক্যাল এজেন্টের ব্যবহার ও সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম করলে অনেকাংশে ভালো থাকা যায়। কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা দেওয়া হয়। এমনকি মারাত্মক ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়া সঠিক দেহভঙ্গিতে ঘাড়ের বিশ্রাম প্রয়োজন।


প্রতিরোধের উপায় : সঠিক দেহভঙ্গি ও সুস্থ জীবনধারা মেনে চলতে হবে। তাই শক্ত, সমান বিছানা, পাতলা তোষক, মাঝারি আকৃতির এক বালিশে শোবেন। প্রয়োজনে সার্ভাইক্যাল কনটোর পিলো ব্যবহার করা যাবে। ঘাড় সোজা রেখে চেয়ারে বসুন। টেলিভিশন দেখার সময় বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় যথাসম্ভব চোখ মনিটরের লেবেলে রাখুন। বিছানায় শুয়ে অথবা একনাগাড়ে দীর্ঘসময় ঘাড় নুইয়ে মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কর্মক্ষেত্রে বা পড়াশোনার সময় টেবিল-চেয়ারের যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখুন। ঘাড়ে, মাথায় বা কাঁধে ভারী জিনিস বহন করবেন না। অত্যধিক ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে ভ্রমণের সময় অর্থোসিস (সার্ভাইক্যাল কলার) ব্যবহার করা যেতে পারে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন না। মাঝে মাঝে উঠে হাঁটাচলা করুন। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোয় থাকুন। নিয়মিতভাবে খাবারতালিকায় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি ও বিভিন্ন খনিজ লবণযুক্ত খাবার রাখুন।


লেখক : ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ


ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা


চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার ,মিরপুর -৬, ঢাকা


হটলাইন : ১০৬৭২, ০৯৬৭৮৮২২৮২২

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال