বিটিবি নিউজ ডেস্ক: লেবাননে পেজার (ডিজিটাল তরঙ্গ কমিউনিকেশন ডিভাইস) বিস্ফোরণে নয় জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৯০০ জন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
রয়টার্স জানায়, লেবাবননজুড়ে বিশেষত দক্ষিণ লেবাবননের হিজবুল্লাহ ঘাঁটিগুলোতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আহতদের মধ্যে রয়েছেন লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সদস্য, মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং বৈরুতে ইরানের রাষ্ট্রদূত।
হিজবুল্লাহ ও অন্যান্যদের যোগাযোগে ব্যবহৃত পেজার বিস্ফোরণকে ইসরায়েলি আগ্রাসন বলে অভিহিত করেছেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারি । একইসঙ্গে তিনি এর নিন্দা জানিয়েছেন।
হেজবোল্লার এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এপি-কে জানিয়েছেন, পেজার বিস্ফোরণ একটা সিকিউরিটি অপারেশনের ফল এবং এই যন্ত্রকে টার্গেট করা হয়েছিল। নতুন পেজারে লিথিয়াম ব্যাটারি ছিল। সেগুলিই বিস্ফোরিত হয়েছে। তার দাবি, এর পিছনে ইসরায়েল আছে। তবে তিনি এই নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
জার্মানির বার্তাসংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, বৈরুতের হাসপাতালে একশরও বেশি মানুষ ভর্তি হয়েছেন। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশজুড়ে হাসপাতালগুলিকে সাবধান করে দিয়ে বলেছে, তারা যেন সতর্ক থাকে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, যাদের কাছে পেজার আছে, তারা যেন ওই ওয়্যারলেস যোগাযোগের যন্ত্র থেকে দূরে থাকেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সত্য উদ্ঘাটিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যেন পেজার ব্যবহার না করেন।
গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আন্তঃসীমান্ত যুদ্ধ চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিজবুল্লাহর এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে প্রায় এক বছরের সংঘাতে পেজার বিস্ফোরণ সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা লঙ্ঘন।
নিউইয়র্ক টাইমস যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁদের কয়েকজন বলেন, তাইওয়ানের গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানি থেকে পেজারগুলো কিনেছিল হিজবুল্লাহ। তবে লেবাননে পৌঁছানোর আগেই সেগুলোতে গড়বড় করে দেওয়া হয়েছিল। পেজারগুলোর বেশির ভাগই ছিল কোম্পানির এপি৯২৪ মডেলের। তবে গোল্ড অ্যাপোলোর আরও তিনটি মডেলের পেজারও ওই চালানে ছিল।
রয়টার্স যোগাযোগ করলে বিস্ফোরণ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানায় ইসরায়েল। নিজেদের যোগাযোগের ডিজিটাল ডিভাইস বিস্ফোরণে ৮ জন নিহত এবং এতো সংখ্যক আহত হওয়ার পর হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা সক্ষমতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
পেজারের মাধ্যমে মেসেজ বিনিময় করা যায়। মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রথম যুগে পেজার এসেছিল। স্মার্টফোন আসার পর পেজার ব্যবহার খুবই কমে গেছে। তবে এখনো কিছু মানুষ তা ব্যবহার করেন।
পেজারের নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সি আছে। তাই তা অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
বৈরুতের অ্যামেরিকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাকরাম রাবাহ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস ল্যান্ডমাইন নেটওয়ার্কের স্বার্থে হেজবোল্লা পেজার ব্যবহার করে। তাছাড়া সম্প্রতি ইসরায়েল মোবাইল ফোন পরিষেবা হ্যাক করেছিল। তার জন্য তারা পেজার ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু এর ফলে তারা নতুন বিপদের মুখে পড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, হেজবোল্লার সাপ্লাই চেইনে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। না হলে, একই সঙ্গে এত পেজারে বিস্ফোরণ হত না। হেজবোল্লা-ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বার্তাসংস্থা এপি-কে জানিয়েছেন, ‘হেজবোল্লা সম্প্রতি এক হাজার পেজার আনিয়েছে। সেগুলিতে বিস্ফোরণ হয়েছে। তাই মনে হচ্ছে, যেখান থেকে তারা এটা আনিয়েছে, সেখানেই বিস্ফোরণের সূত্র খুঁজতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা এই ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানত না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ‘আমি এটা বলতে পরি, এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যোগ নেই। আমরা আগে থেকে এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমরা ইরানের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তারা যেন কোনো ঘটনার সুবিধা না নেয়।’
জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেছেন, লেবাননে যা হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। এর ফলে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে। ডিডাব্লিউ, এপি, এএফপি, রয়টার্স
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন